ব্যতিক্রম শিক্ষাক্রম
৫ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় প্রতিটা বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে-ইতিহাসে ভরা। বাংলা ১ম পত্রে গদ্যে বঙ্গবন্ধুর জীবনী,পদ্যে বঙ্গবন্ধুর স্তব নিয়ে কবিতা। বঙ্গবন্ধু কথা আশা মানেই মুক্তিযুদ্ধের কথা আসা। আবার বাংলা ২য় পত্রের রচনা আছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’,‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’,‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’। ইংরেজি ১ম পত্র বইয়েও দুই এক Lesson এ মুক্তিযুদ্ধের কথা আছে। ইংরেজি ২য় পত্রেও Paragraph,Letter হিসেবেও আছে মুক্তিযুদ্ধ। যেমন ঃ Paragraph আছে Victory Day,Independent Day,21st February,Our Liberation War,A Freedom Fighter. স্কুলে বিজয় দিবস,স্বাধীনতা দিবস পালন নিয়েও আছে ইংরেজি Letter,Dialogue,Composition. এতেই শেষ নয় ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ নামক একটা বিষয় তো আছেই,এখানে বিশাল অধ্যায়ের মধ্যে শিখানো হয় মুক্তিযুদ্ধের আদি থেকে প্রান্ত পর্যন্ত।বাকি আছে শুধু গণিত আর বিজ্ঞান। হয়তো কয়দিন পর গণিতেও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাওয়া যাবে। তখন হয়তো অংকগুলো হবে এই রকম,“১২ জন মুক্তিযোদ্ধা সাহসী আক্রমণে ৩০ জন পাকিস্তানি সৈন্য মারা গেছে এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছে,তাহলে মৃত পাকিস্তানি সৈনিক ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার অনুপাত নির্ণয় কর।” বা ত্রিকোণমিতিও আসতে পারে; যেমন,“৫ মিটার দূরে শুয়ে থাকা পাকিস্তানি সৈনিক ও দণ্ডায়মান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতের রাইফেলের উন্নতি কোণ ৩০ ডিগ্রি হলে,বীর মুক্তিযোদ্ধার উচ্চতা কত?”
এই ভাবে প্রতি শ্রেণিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শিখানোর মানে কি?আমি বলছিনা মুক্তিযুদ্ধ বা জাতীয় নেতাদের সম্পর্কে শিক্ষার প্রয়োজন নেই। অবশ্যই আছে। যে জাতি নিজের দেশ ও দেশের ইতিহাস না জানে সে জাতি অভাগা জাতি; সে জাতি অকৃতজ্ঞ জাতি; সে জাতির উন্নতি অসম্ভব। যে শত্রু চিনে না,সে তার প্রকৃত বন্ধুও চিনে না। যে দুঃখের অতীত জানে না,সে সুখের ভবিষ্যৎ সাজাতেও জানে না। তাই ইতিহাস জানার প্রয়োজন অবশ্যই আছে। তবে এইভাবে প্রতিটা বিষয়ে-বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ইতিহাস শিখানোর মানে কি? এতে শিশু কিশোররা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়তে পড়তে বিরক্ত হচ্ছে। প্রতিটা বিষয়ে বইয়ের পাতা উল্টালেই পাওয়া যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। অতিরিক্ত ইতিহাস শিক্ষার কারণে শিখানো হচ্ছে না গুরুত্বপূর্ণ অনেক শিক্ষা।
গার্হস্থ্য,কৃষি,কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা নামক আরো যে কয়টি সাবজেক্ট আছে এগুলো ক্লাসে গুরুত্বের সাথে পড়ানো হয় না বা ছাত্র-ছাত্রীরা গুরুত্ব নিয়ে পড়ে না। ধর্ম শিক্ষার সাবজেক্টটিও গুরুত্ব পাচ্ছে না। তাহলে প্রকৃত পক্ষে তাদের কি জ্ঞান অর্জন হচ্ছে? শুধু প্রাথমিক শিক্ষা থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা পর্যন্ত পড়ালেখা করে ছাত্র-ছাত্রীরা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে শিক্ষা ছাড়া আর কোন মহাশিক্ষা অর্জন করে বলে আমার মনে হয় না। আবার ইতিহাস শিক্ষা দিলেও বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস ও বিশ্ব ইতিহাস খুব কমই শিক্ষা দেয়া হয়। তাহলে গদ্য,পদ্য,পেরাগ্রাফ,লেটার,ডায়ালগ সহ বার বার উলোট-পালট করে শুধু এক ধরনের ও শুধুমাত্র একটি যুদ্ধের ইতিহাস শিক্ষা দিয়ে লাভ কি?
আমি এর জন্য দোষ দিবো আমাদের অসৎ রাজনীতি,নীচু মনমানসিকতাকে। আমাদের সরকার বদলের সাথে সাথে ইতিহাস পরিবর্তন হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা আবার নতুন করে ইতিহাস শিখে। তাই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ’৭১ মাত্র একবার হলেও বাংলার মানুষের মুখে মুখে দুই ধরনেই ইতিহাস প্রচলিত। এর কারণ অসৎ রাজনীতি ও নীচু মনমানসিকতা। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলে ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ
জাতীয় ৪ নেতা সম্পর্কে পাঠ্যবইয়ে তেমন কিছু না দিলেও বারবার প্রতি বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি ও কৃতিত্ব তুলে ধরবেই,এতে ছাত্র-ছাত্রীরা
এক ব্যক্তি সম্পর্কে প্রতি বিষয়ে পড়তে পড়তে ক্লান্ত। আমার মত শিক্ষকরাও পড়াতে পড়াতে ক্লান্ত। এইভাবে বিরক্তির সাথে পড়তে ও পড়াতে গেলে বিরক্তির কারণে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির প্রাপ্য শ্রদ্ধা ছাত্র-ছাত্রীর মন থেকে হারিয়ে যায়। আবার বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে পাঠ্যবইয়ে এমনভাবে ইতিহাস লিখে যেনো মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র মহান নেতা জিয়া।
আমাদের পাঠ্য বইয়ের তালিকায় ইতিহাস শিক্ষার জন্য মাত্র একটি বিষয় নির্ধারণ করে দেয়া হোক। অন্যদিকে বর্তমান বিষয়গুলোর সাথে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা দেয়া যায়। যেমন আমাদের দেশে আইন মানার প্রবণতা বেশি তাই পাঠ্য বইয়ে অল্প অল্প করে সহজ আইন শিক্ষা দেয়া যেতে পারে,বেশি করে স্বাস্থ্য ও প্রাথমিক চিকিৎসা শিক্ষা দেয়া যেতে পারে,আমাদের জাতীয় উন্নয়নে সম্ভাবনার দিক গুলো তুলে ধরা যেতে পারে পাঠ্য বইয়ে,যাতে তারা শিশুকাল থেকে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতে শিখে;তথ্য ও প্রযুক্তি শিক্ষার বিষয়টিকে সামনের সারিতে আনতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রুপ দিতে হবে,ছাত্র-ছাত্রীদের আচরণ,চরিত্র গঠন ও প্রকৃত নাগরিক হয়ে গড়ে উঠার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষার জন্য আলাদা বিষয় নির্ধারণ করা যেতে পারে।
এইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সিলেবাসে যুক্ত না করে প্রতি বিষয়ে একই ধরনের ইতিহাস শিক্ষা দিয়ে কি লাভ হচ্ছে আমার জানা নেই।
Post a Comment