Header Ads

মানব ক্লোনিং



মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানব গবেষণা কেন্দ্র “ক্লোন এইড” বিশ্বে প্রথম মানব ক্লোন করতে সক্ষম হয়েছেন ২৬ ডিসেম্বর,২০০২ (স্থানীয় সময় ১১.৫৫ ঘটিকায়)। ক্লোন এইডের প্রধান ফরাসি রসায়নবিদ ব্রিজিত ব্রোয়সেলিয়ার ক্লোনকৃত কন্যা শিশুটির নাম দিয়েছন ‘ইভ’। ‘রেইলিয়ান’ নামক এক ধর্ম গোষ্ঠী যারা বিশ্বাস করেন যে,ভিন গ্রহের কোনো আগন্তুকের ক্লোনই হচ্ছে মানব প্রজাতি,তাদেরই প্রতিদান ক্লোন এইড মানব ক্লোনিং-এর মতো একটি স্পর্শকাতর ও বিতর্কিত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। আসলে বর্তমান বিশ্বে বিদ্যমান নানা রাজনৈতিক ও সামরিক সংকটের ডামাডোলের মধ্যে ইভের জন্ম নেয়ার খবরটা কিছুটা হলেও তিক্ত বৈচিত্র এনেছে। ক্লোন এইডের প্রধান ফরাসি বিজ্ঞানী জানিয়েছেন,৩১ বছর বয়সী এক মার্কিন মহিলার পেটে সিজার অপারেশন করে নবজাতককে পৃথিবীর আলোয় নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি বলেন,৭ পাউন্ড ওজনের মানব শিশুকে যুক্তরাষ্টের বাইরে কোথাও জন্ম দেয়া হয়েছে। ক্লোন এইড প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৭ সালে। ক্লোন এইডের প্রতিষ্ঠাতারা বিশ্বাস করেন,এখন থেকে মাত্র ২৫ হাজার বছর আগে মহাজাগতিক কোনো ভিন গ্রহের বাসিন্দারা নিজেদের ল্যাবরেটরিতে ক্লোনিংয়ের মাধ্যমেই প্রথম মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন। রেইলিয়ানদের এই দাবি যদি সত্য হয় তাহলে মানব জন্মে বিবর্তনবাদ,প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় সৃষ্টিতত্বগুলো এমনকি অনেক বৈজ্ঞানিকের যুক্তি পর্যন্ত পাল্টে যাবে।বিষয়টির সত্য-মিথ্যা নিয়ে চলছে বিতর্ক। বিজ্ঞানীরা সত্যতা প্রমাণে শুধু DNA পরীক্ষাকেই মেনে নিবেন না বলে দাবি তুলেছেন। এতেও ভুল থাকতে পারে। এজন্য গবেষণা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গোটা প্রক্রিয়াটাই দেখতে হবে। এরপরই কেবল বলা যাবে এর সত্য,মিথ্যা। রেইলিয়ানরা মনে করেন,ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে মানব শিশু জন্মদান মানুষের অমরত্ব লাভের প্রাথমিক পদক্ষেপ। অনেক বিজ্ঞানী কিন্তু রেইলিয়ানদের এই ধারণাকে এখনও সমর্থন করে না। প্রথম ক্লোন মানুষ ইভের বয়স কত থেকে শুরু হবে,তা নিয়েও তুলকালাম কান্ড বেধে গেছে। যার কোষ থেকে ইভের জন্ম,অর্থাৎ তার মায়ের বয়স ৩১ বছর। হিসাব মতে ইভের জীবন শুরু হয়েছে ৩১ বছর বয়স বয়সে। তাই সদ্যজাত হয়েও ‘ইভ’ আসলে এক বুড়ো শিশু।হয়তো সে বড় হতে না হতেই বুড়ি হয়ে যাবে। আবার এ বিষয়ে ভিন্নমতও রয়েছে। তাদের বিশ্বাস একেকটি ক্লোন মানব হবে সুপারম্যানের মতো অসীম শক্তি আর ক্ষমতার অধিকারী। ভবিষ্যতে হয়তো রোবট একদিন মানুষের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবে। তখন রোবটদের হাত থেকে বিপন্ন মানব প্রজাতিকে রক্ষায় এগিয়ে আসবে ক্লোন মানুষেরা।

কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন,ক্লোন ব্যক্তিরা নানা ধরনের মানসিক সমস্যার শিকার হতে পারে। তাদের পরিচয় সংকট Identity Crisis হতে পারে এবং ক্লোন দাতার সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে। কেউ কেউ এ ব্যাপারে শংকা প্রকাশ করেছেন যে,ক্লোনিং সামাজিক সম্পর্কের ওপর কি প্রভাব ফেলবে একটি শিশু তাকে তার বাবার DNA থেকে ক্লোন করা হয়েছে,যে হবে তারই বাবার একজন জময। এ ধরনের ঘটনা আগে কখনোই ঘটে নি এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটা মানসিক ও আবেগিক সমস্যার জন্ম দেবে। অতএব দেখা যাচ্ছে যে,ক্লোনিং-এর উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি হুবহু ফটোকপি তৈরি করা। এমন কোনো মানব শিশু নয় যে আলাদা একটি মন ও ব্যক্তিত্ব নিয়ে বেড়ে উঠবে। নানা প্রতিকূলতা ও ভীতিকর সম্ভাবনা থাকা সত্বেও বিশ্ব আজও এ বিষয়ে একমত হতে পারে নি যে,ক্লোনিং সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে দেয়া উচিত কি না। আমেরিকা সকল ধরনের ক্লোনিং নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করেছে। গর্ভপাত বিরোধী গ্রুপগুলো বিভিন্ন গির্জা এমনকি প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ নৈতিকতার স্বার্থে ক্লোনিং নিষিদ্ধ করার পক্ষে। এছাড়াও জার্মানি,ফ্রান্স,স্পেন,ফিলিপাইন,জাপান ক্লোনিং নিষিদ্ধের পক্ষে। বর্তমান বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেন,আমরা চাই বা না চাই,মানব ক্লোনিং হবেই। ক্লোন মানব হচ্ছে জ্ঞান-গরিমায় উঁচু স্তরের।

No comments